Ad Code

মানব বিবর্তন

সুইডিশ বিজ্ঞানী সান্ত পাবো মানব বিবর্তন নিয়ে অনন্যসাধরণ কাজের জন্য শারীরবিদ্যা/মেডিসিনে ২০২২ সালের নোবেল পুরস্কার পেলেন।

যারা মানব বিবর্তন নিয়ে পড়াশোনা করছেন, তাদের কাছে নামটা পরিচিত।

নোবেল কমিটি বলেছে, তিনি আমাদের বিলুপ্ত আত্মীয় নিয়েণ্ডারথালদের জেনেটিক কোড ক্র্যাক করার মত আপাতদৃষ্টিতে অসম্ভব কাজটি করতে পেরেছেন। শুধু তাই নয়, তিনি আধুনিক মানুষের আরেক জ্ঞাতি ভাই ডেনিসোভানদের আবিষ্কার করার ক্ষেত্রেও "চাঞ্চল্যকর" কাজ করেছেন।
সেই যে মৌলিক প্রশ্ন, আমরা কোথা থেকে এসেছি, আমাদের জ্ঞাতি কারা, সেই জ্ঞাতিরা কেন বিলুপ্ত হয়েছে, কেন হোমো স্যাপিয়েন্স টিকে রইল, কেন আমরা কথা বলতে পারি, আমাদের জ্ঞাতিরা কি কথা বলতে পারত? - এই প্রশ্নগুলো নিয়ে যেসব আণবিক জীববিজ্ঞানী, জনজাতি জিনবিদ, বিবর্তনীয় জিনবিদরা কাজ করছেন সান্ত পাবো তাদের মধ্যে শুধু অগ্রগণ্য নয়, তাঁকে প্যালিওজেনোমিক্স অর্থাৎ প্রত্নজিনবিদ্যার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বলা যায়।

বেঁচে থাকা মানুষের ডিএনএ বিশ্লেষণ করা যায়, সে আমরা সকলেই জানি। তবে প্রাচীন কঙ্কালের ডিএনএ বিশ্লেষণ করে আমাদের ইতিহাস, আমাদের পূর্বজ, জ্ঞাতিদের সম্পর্কে বহু তথ্য পাওয়া যায়। সাম্প্রতিককালে প্রাচীন ডিএনএ বিশ্লেষণ করে পাওয়া তথ্য বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর পৃথিবীব্যাপী পরিযান নিয়ে তথ্য দিয়েছে। ডেভিড রাইখের নাম আমরা শুনেছি, ভারতের ইতিহাস নির্মাণ প্রসঙ্গে ২০১৯ সালে জনজাতি জিনবিদ্যার বিভিন্ন গবেষণাপত্র নিয়ে খবরের কাগজে রীতিমত রাজনৈতিক ঝড় বয়ে গেছে।

সান্ত পাবো অবশ্য আরেক ধাপ এগিয়ে গিয়ে আমাদের বিলুপ্ত আত্মীয় নিয়েণ্ডারথালের প্রাচীন কঙ্কালের ডিএনএ বিশ্লেষণ করতে সফল হয়েছেন। এই কাজ কতটা কঠিন, একটা উদাহরণ দিলে বোঝা যাবে। হরিয়ানার রাখিগর্হিতে ৪৫০০ বছর আগের হরপ্পীয় সভ্যতার ৬১ টি কঙ্কালের মধ্যে মাত্র ১টির সফল ডিএনএ সিকুয়েন্স করা সম্ভব হয়েছিল দক্ষিণ কোরীয় জিনবিদদের সাহায্যে। সেখানে ৩৫-৪০ হাজার বছর আগের ‘অন্য মানুষে’র কঙ্কালের জিনোম সিকুয়েন্স করা যে অত্যন্ত কঠিন কাজ ছিল, সে আমাদের মত আদার ব্যাপারীরাও বেশ বুঝতে পারি। পাবো চেষ্টা করেছেন, অধুনা লুপ্ত বিভিন্ন মানব প্রজাতির প্রাচীন ডিএনএ থেকে পূর্ণ জিনোম সিকুয়েন্স করে তাদের সঙ্গে আধুনিক মানুষের তুলনা করতে।

আমরা জানি, আধুনিক মানুষ ও ‘নিয়েণ্ডারথাল’-রা নিজেদের মধ্যে মিলনে সক্ষম ছিল। শুধু তাই নয়, তাদের সন্তানরাও পরের প্রজন্মের জন্ম দিতে পেরেছে। আজও তাই আফ্রিকার বাইরে সব মানুষ বয়ে বেড়াচ্ছে ১-৪% ‘নিয়েণ্ডারথাল’ জিন।

আমাদের বিলুপ্ত আত্মীয়দের কাছ থেকে পাওয়া কিছু জিন আজকের মানুষের শরীরবিদ্যাকে প্রভাবিত করে। এরকম একটি উদাহরণ হল EPAS1 জিনের ডেনিসোভান সংস্করণ, যা উঁচু জায়গায় বেঁচে থাকার জন্য তাদের সুবিধা দিয়েছিল, এখন তিব্বতিদের মধ্যে এই জিন পাওয়া যায়। নিয়েণ্ডারথালের জিনও বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণের থেকে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে।

নতুন পথে বিজ্ঞান এগিয়ে চলেছে, প্রাচীন বিলুপ্ত মানবের জিনের সঙ্গে আধুনিক মানুষের জিনের তুলনা করে তার কার্যকারিতা হয়তো চিকিৎসার ক্ষেত্রেও নতুন পথের সন্ধান দেবে।
অভিনন্দন সান্ত পাবো, অভিনন্দন প্রত্নজিনবিদ্যা, জনজাতি জিনবিদ্যা, বিবর্তনীয় জিনবিদ্যার অনলস বিজ্ঞানীদের। নতুনভাবে নিজেদের চিনতে, জানতে, আমাদের প্রাগিতিহাসকে তুলে ধরতে এই বিদ্যা ভবিষ্যতে নির্ঘাত আরও কার্যকরী হবে।
এই বিষয়ে আগ্রহী আমাদের ছেলেমেয়েরাও হয়তো এমন খবর পেয়ে আরও বেশি করে বিবর্তনীয় জিনবিদ্যা নিয়ে গবেষণা করতে এগিয়ে আসবে।

Madhusree Bandyopadhyay
03/10/2022

Post a Comment

0 Comments