নবম শ্রেণীর ইতিহাস অধ্যায় 4
4.1শিল্প বিপ্লব কী ?
কোনে ক্ষেত্রে দ্রুত এবং আমূল পরিবর্তনকে সাধারণভাবে বিপ্লব বলা হয় ।আর শিল্প বিপ্লব হল শিল্পের ক্ষেত্রে দ্রুত এবং আমূল পরিবর্তন ।শিল্প বিপ্লব কথাটি প্রথম ব্যবহার করেন
Louis A. Blanqui.
শিল্প বিপ্লব কথাটি (1837 সালে )জনপ্রিয় করেন Arnold Toynbee (1880-81)
শিল্প বিপ্লবের সূচনা হয় মূলত বস্ত্র শিল্প কেন্দ্র করে
কোথায়- ইংল্যান্ডে এবং পরে ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া, জাপানে (1760 -1780)
ফলাফল
তাৎক্ষণিক-
বৃহৎ কলকারখানার উদ্ভব ।
নগরজীবনের ব্যাপক প্রসারণ
সুদুরপ্রসারী-
সমাজে মালিক-শ্রমিক এই দুই শ্রেণীর উদ্ভব হয়
সমালোচনা-
ঐতিহাসিক Hazen , Hayes প্রমুখরা শিল্প বিপ্লব কথাটি মানতে চাননি ।
তাদের মতে শিল্প বিপ্লব বিপ্লব নয় । ইউরোপের তৎকালীন পরিস্থিতিকে শিল্প বিবর্তন বলাই বেশি যুক্তিযুক্ত।
4.2 শিল্প বিপ্লব ও ইংল্যান্ড
ইংল্যান্ডের প্রথম শিল্প বিপ্লব হওয়ার কারণ -
-নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া বস্ত্র বয়ন শিল্পের উপযোগী
-ইংল্যান্ডের ভৌগলিক অবস্থান... চতুর্দিক সমুদ্র
- কাঁচামাল ,প্রশস্ত বাজার এবং মূলধন এর ব্যাপক উপস্থিতি
- প্রচুর শ্রমিকের প্রতুলতা
-প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্যতা (লোহা, কয়লা , তামা, টিন )
-বৈজ্ঞানিক ও কারিগরি আবিষ্কার
-উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা
-সরকারি সহযোগিতা
4.3 মহাদেশে শিল্পবিপ্লব ও বিস্তার
বেলজিয়াম-
ইংল্যান্ডের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় শুরু হয়
শিল্প বিপ্লব । 1870 এর মধ্যে বেলজিয়াম
হয়ে ওঠে ইউরোপের শিল্পসমৃদ্ধ দেশ ।
উইলিয়াম ককরিলের এর উদ্যোগে বস্ত্র
শিল্পের উন্নয়ন দেখা যায় ।
ফ্রান্স-
বিভিন্ন সামাজিক , অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক
প্রতিকূলতার জন্য একটু দেরিতে শুরু হয় ।
যাইহোক লুই ফিলিপের আমলে রেলপথ
স্থাপন হয় ও পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি
হয়( 1832 সালে ) ।নেপোলিয়নের
Bark of France স্থাপনাও শিল্পক্ষেত্রে বিরাট সংযোজন ।
জার্মানি-
শিল্পের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক অস্থিরতা ছিল
একটি বিরাট অন্তরায় । কারণ প্রায় 40 টি
প্রদেশে বিভক্ত ছিল জার্মানি ।
যাই হোক জার্মানিতে শিল্পায়নে গতি দ্রুত হয়
1871 খ্রিস্টাব্দে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পর । এক্ষেত্রে
বিসমার্ক ও কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়াম এর নাম
বিশেষ উল্লেখ যোগ্য।
রাশিয়া -
রাশিয়ার শিল্পায়ন অনেক দেরিতে শুরু হয় ।এর প্রধান
কারণ হলো রাশিয়ার সামন্ত প্রথার ব্যাপকতা ও ভূমিদাস
প্রথার উপস্থিতি । দ্বিতীয় আলেকজান্ডার 1861 খ্রিস্টাব্দে
ভূমিদাস প্রথা উচ্ছেদ করে শিল্পায়নে অগ্রসর হন । ফ্রান্স ও
জার্মানির সহায়তায় রাশিয়ায় রেলপথ সম্প্রসারণ করলে মূলধন
ভিত্তিক শিল্প গড়ে ওঠে ।
4.4 শিল্প বিপ্লবের ফলাফল বা শিল্প বিপ্লবের সুফল ও কুফল
শিল্পবিপ্লব মানব সভ্যতার ইতিহাসে অবশ্যই এক তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা । শিল্প বিপ্লব সমাজ ও অর্থনীতির ওপর গভীর প্রভাব বিস্তার করেছিল ।এককথায় মানব সভ্যতার প্রগতির পথে শিল্প বিপ্লব ছিল আশীর্বাদ স্বরূপ। কিন্তু পরবর্তীতে এই শিল্প বিপ্লব আশীর্বাদ এর সঙ্গে কিছু কিছু অভিশাপ বয়ে নিয়ে এসেছিল ।
শিল্প বিপ্লবের সুফল-
শিল্প বিপ্লবের ফলে শিল্প বা কলকারখানা ও ব্যবস্থাস্থলকে কেন্দ্র করে নতুন নতুন নগরের সৃষ্টি হয় ।গ্রামের কৃষক ও সাধারণ মানুষ অর্থ উপার্জনের জন্য ও সর্বোপরি উন্নত জীবনযাপনের জন্য দলে দলে শহরে আসে ।এরফলে নগরকেন্দ্রিক সমাজ ও সভ্যতার সৃষ্টি হয় । উদাহরণ- ম্যানচেস্টার, বার্মিংহাম , লিডস ইত্যাদি ।
ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার
শিল্প বিপ্লবের ফলে দ্রব্যের উৎপাদন প্রচুর পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছিল । উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটেছিল এবং এই উৎপাদিত সামগ্রী পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বাজারে ছেয়ে গিয়েছিল ।
শ্রম বিভাজন নীতি
শিল্প বিপ্লবের পূর্বে একজন শ্রমিক নিজেই একটি দ্রব্য তৈরি করত । কিন্তু শিল্প বিপ্লবের ফলে একটি দ্রব্য বিভিন্ন শ্রমিকের মিলিত পরিশ্রমে তৈরি হতো ।
সাম্যবাদ
শিল্প বিপ্লবের পরোক্ষ ফলাফল ছিল সাম্যবাদ বা সমাজতন্ত্রের উদ্ভব । শিল্প বিপ্লবের ফলে সমাজে শ্রমিক ও মালিক শ্রেণীর মধ্যে অসাম্য সৃষ্টি হয়েছিল । এই অসাম্য দূর করার জন্য সাম্যবাদ বা সমাজতন্ত্রের উদ্ভব
হয় ।
শিল্প বিপ্লবের কুফল
মালিক ও শ্রমিক শ্রেণীর সংঘাত
মালিকরা শ্রমিকদের শোষণ করে অর্থ উপার্জন করার চেষ্টা করত । অত্যধিক কাজের চাপ, অস্বাস্থ্যকর বাসস্থান, অমানবিক আচরণ শ্রমিকদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলতো ।
উপনিবেশিক প্রতিদ্বন্দ্বীতা
শিল্প বিপ্লবের ফলে পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি পায় উৎপাদিত সামগ্রী বিক্রির জন্য ইউরোপের অন্যান্য কয়েকটি দেশ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করতে সচেষ্ট হয় ।ফলে শিল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে উপনিবেশ দখলের লড়াই শুরু হয়।
শ্রেণী বৈষম্য সৃষ্টি
মালিক ও শ্রমিক শ্রেণীর মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি হয় ।
কারণ মালিকরা শ্রমিকদের শোষণ করে ধনী
হওয়ার চেষ্টা করত এবং শ্রমিকরা শোষিত
হতে হতে শেষ হয়ে যেত ।
0 Comments