Ad Code

পুঁথিদাদু

 

নিজে স্কুলের গণ্ডিও পার হননি৷ অথচ পড়ান কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের৷ জ্ঞান যে প্রথাগত শিক্ষার ধার ধারে না, তার জলজ্যান্ত উদাহরণ তিনি৷ কেউ বলেন পুঁথিদাদু৷ কেউ বলেন চলমান এনসাইক্লোপিডিয়া৷ নিন্দুকে তো বইপাগলও বলে৷ গুরুচরণ গড়াই বললে অবশ্য ৭৭ বছরের এই বৃদ্ধকে চিনতে পারবেন না প্রায় কেউই৷ পুরুলিয়ার বাঘমুণ্ডি থানার বুড়দা গ্রামের এই মানুষটাকে পুঁথিদাদু নামে এক ডাকে চেনেন ব্লকের প্রায় সকলেই৷ চিনবে না-ই বা কেন? সাহিত্য হোক বা ব্যাকরণ, দর্শন হোক অথবা সাধারণ জ্ঞান - পড়ুয়াদের মুশকিল আসান পুঁথিদাদু ও তাঁর গ্রন্থাগার৷

পেশায় কৃষক পুঁথিদাদুর কাছে পড়তে আসেন স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের ছাত্রছাত্রীরা৷ এহেন মানুষটির পড়াশোনা কিন্তু সপ্তম শ্রেণি অবধি৷ ছাত্রছাত্রীদের অনায়াস দক্ষতায় যখন সাহায্য করেন, তখন কে বলবে প্রথাগত ডিগ্রি নেই তাঁর? সম্পূর্ণ নিজের উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন ‘চৈতন্য গ্রন্থাগার’৷ বইয়ের সংখ্যা এক হাজারেরও বেশি৷ সেখানে গেলেই বই পড়তে পাওয়া যায় সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে৷ পড়াশোনায় সাহায্যের জন্য পুঁথিদাদু প্রস্ত্তত সবসময়৷ কোন বইয়ের কোন পাতায় কী লেখা রয়েছে, সবই নখদর্পণে তাঁর৷ টিউশনের পয়সা পুরোটাই প্রায় খরচ হয়ে যায় গ্রন্থাগারের পিছনে৷ নিজেই জানালেন ছোটবেলার কথা৷ মাত্র ১১ বছর বয়সে বাবা মারা গিয়েছিলেন৷ সংগ্রামের সেই শুরু৷ কিন্তু ভাঁটা পড়েনি বইপ্রীতিতে৷ অভাবে স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়৷ চেয়েচিন্তে বই আনতেন গুরুচরণ৷ মা ফুটিবালা নিরক্ষর হলেও বইয়ের কদর জানতেন৷ হতদরিদ্র পরিবারে ধান বিক্রির টাকায় ৷

কেনা হত বই৷ স্কুলে যাওয়া বন্ধ হওয়ার বছর তিনেক পর ১৯৫৩ সালে নিজের বাড়িতে গ্রন্থাগার গড়ে তোলেন গুরুচরণ৷ নাম দেন চৈতন্য গ্রন্থাগার৷ চাষের কাজের পাশাপাশি চলতে থাকে বই সংগ্রহের কাজ৷ সেই সঙ্গে পড়াশোনা৷ একটু স্বাচ্ছন্দ্যের আশায় ছাত্রছাত্রীদের পড়াতে শুরু করেন৷ লোকমুখে খ্যাতি ছড়িয়ে পড়তে বেশি সময় লাগেনি৷ এখানেই শেষ নয়, সাহিত্যচর্চাও করেন গুরুচরণ৷ ‘কোরক’ নামে একটি কাব্যগ্রন্থও প্রকাশিত হয়েছে তাঁর৷ গুরুচরণের দুই ছেলেও চাষবাস করেই সংসার চালান৷ সংসারে টানাটানি থাকলে কি হবে, বাবাকে উত্‍সাহ জোগান তাঁরা৷ পুঁথিদাদুর বড় ছেলে শিবরাম গড়াই জানালেন, যতই দারিদ্র থাকুক, বাবাকে বাধা দেওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই৷ একমুখ খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি৷ পরনে আধময়লা সাদা ধুতি৷ নিতান্তই সাধারণ চেহারার মানুষটা যে এমন অসাধারণ সাধনায় মেতে রয়েছেন , তা নিয়ে গর্বিত প্রতিবেশীরাও৷ বুড়দা গ্রামের বাসিন্দা প্রাক্তন বিধায়ক তথা ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য কমিটির সদস্য নিশিকান্ত মেহেতা বলেন, ‘পুঁথিদাদু ও তাঁর লাইব্রেরি না থাকলে এলাকায় এত দ্রুত শিক্ষার প্রসার ঘটত না৷ এখানে এমন কেউ নেই, যিনি পড়াশোনায় পুঁথিদাদুর সাহায্য নেননি৷


(সংগৃহীত)

Post a Comment

0 Comments