Ad Code

দশম শ্রেণি ভূগোল পর্ব 1




দশম শ্রেণি ভূগোল পর্ব 1

 1. চিত্রসহ নদীর সঞ্চয় কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপ এর বর্ণনা দাও।

নদী তার মধ্য এবং নিম্নগতিতে সঞ্চয় কার্যের ফলে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিরূপ গড়ে তোলে যেমন ধরো পলোল ব্যজনী ,অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ ইত্যাদিI এর মধ্যে গুরুত্ব বিচার করে যে দুটো ভূমিরূপ আমরা আলোচনা করব তার একটি প্লাবনভূমি বা স্বাভাবিক বাধ অন্যটি বদ্বীপ  ।  সমভূমি প্রবাহে নদীর খাদে গভীরতা যখন হ্রাস পায় ,তখন বর্ষাকালে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের ফলে নদীর জল হঠাৎ বৃদ্ধি পেলে সেই অতিরিক্ত জল ছাপিয়ে পার্শ্ববর্তী উপত্যকা অঞ্চল প্লাবিত করে এবং নদীবাহিত পলি পার্শ্ববর্তী এলাকায় যে সমভূমি সৃষ্টি হয় তাকে বলে প্লাবনভূমি  ।  নদীতে প্লাবন হওয়ার সময় নদী খাতের ঠিক পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে যেখানে সব থেকে বেশি পরিমাণ পলি জমা হয় সেই অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবছর বন্যার ফলে পলি জমতে জমতে নদী এবং প্লাবন সমভূমির মধ্যবর্তী অংশে একটু বেশি উচ্চতা সম্পন্ন যে বাঁধ সৃষ্টি হয় তাকে বলে স্বাভাবিক বাঁধ   এই স্বাভাবিক বাঁধের যে অংশ নদীর দিকে থাকে তার ঢাল তুলনামূলক খাড়া হয় এবং প্লাবন ভূমির দিকে যে অংশ থাকে সেটি কিছুটা কম ঢাল যুক্ত হয় । স্বাভাবিক বাঁধ বা লিভি এর যে অংশটি নদীর দিকে থাকে তা তুলনামূলক খাড়া হয় এবং প্লাবনভূমি দিকে যে অংশটি থাকে সেটি কিছুটা কম ঢাল যুক্ত হয় । স্বাভাবিক বাঁধের উচ্চতা হয় দুই থেকে তিন মিটার কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় এমন কিছু স্বাভাবিক বাঁধ দেখা যায় যেমন -চীনের হোয়াংহো নদীতে যে স্বাভাবিক বাঁধ দেখা যায় তার গড় উচ্চতা হয় 7 থেকে 10 মিটার পর্যন্ত Iউদাহরণস্বরূপ বলা যায় গঙ্গার মধ্যগতি মুরশিদাবাদের কাছে ও নীল নদের গতিপথে কিন্তু এরকম একাধিক স্বাভাবিক বাঁধ গড়ে উঠেছে ।

এবার দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিরূপ হচ্ছে বদ্বীপI আমরা জানি যে  মোহনার কাছে নদীর গতিবেগ একদম কমে যায় । তখন সেখানে নদীবাহিত যে পদার্থ, বালুকণা সেগুলো আস্তে আস্তে নদীবক্ষে সঞ্চিত হতে থাকে Iএইভাবে সঞ্চয় হওয়ার ফলে নদী একটি মাত্রাহীন বাংলার ব এর মত একটি ভূমিরূপ গঠন করে তাকে বলে বদ্বীপ  

তবে পৃথিবীতে সব নদীতে কিন্তু বদ্বীপ গড়ে ওঠে না Iবদ্বীপ গড়ে উঠতে গেলে কিছু আবশ্যিক শর্ত পূরণ করা প্রয়োজন   যেমন ধরো নদীতে জলের পরিমাণ বেশি হতে হবে   । নদীতে সেই জলের সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে বাহিত বস্তুর পরিমাণ বেশি থাকতে হবে   নদীতে জলের গতিবেগ খুব কম থাকতে হবে এবং নদী যেদিক দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে তার ঠিক বিপরীত দিকে বায়ুপ্রবাহ হতে হবে  । এই শর্তগুলো যদি পূরণ করা যায় তাহলেই কোনো নদীতে বদ্বীপ গড়ে উঠতে পারে  

2.মরুভূমি সম্প্রসারণ রোধের তিনটি উপায় লেখ

মরুভূমি সম্প্রসারণ বর্তমান পৃথিবীতে মারাত্মক ক্ষতিকারক অবস্থা  

মরুভূমি সম্প্রসারণ রোধে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারেI

এর মধ্যে প্রথমে আমরা যেটা বলতে পারি সেটা হল -

লতা এবং গুল্ম জাতীয় বৃক্ষ রোপন করে বালিয়াড়ি গুলিকে স্থিতিশীল করা যেতে পারে এবং বায়ুপ্রবাহের সঙ্গে আড়াআড়িভাবে যদি আমরা ঝোপঝাড়, কাটা গাছ এবং বিভিন্ন ধরনের খরা সহনকারী বৃক্ষ সেখানে রোপণ করতে পারি তাহলে কিন্তু বায়ু প্রবাহে কিছুটা বাধা দেয়া যায় এবং মরু সম্প্রসারণ কিছুটা আটকানো যায় ।

এছাড়া আমরা দ্বিতীয়ত বলতে পারি যে খরা সহনকারী যে কাটা গাছ এবং ঝোপঝাড় সেগুলো কে রোপন করা এবং পাশাপাশি আড়াআড়িভাবে কংক্রিটের দেয়াল বানিয়ে বাতাসের যে তীব্রতা সেটাকে কিছুটা আটকে দেওয়া ।

তৃতীয়ত আমরা বলতে পারি পশুচারণ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি মরু অঞ্চলের সমোন্নতি রেখা বরাবর গাছ লাগানো এবং সব থেকে যেটা গুরুত্বপূর্ণ মরু অঞ্চলের পার্শ্ববর্তী ক্ষেত্রে ফালি চাষ এবং শস্যাবর্তন পদ্ধতির মাধ্যমে কিন্তু ভূমিক্ষয় রোধ করা যায় ।

এই পদ্ধতি গুলোকে যদি আমরা খুব ভালোভাবে চালিয়ে যেতে পারি তাহলে কিন্তু মরুভূমি সম্প্রসারণ কিছুটা হলেও আটকানো যেতে পারে।

3. ভারতবর্ষের পূর্ব এবং পশ্চিম উপকূলীয় সমভূমি পার্থক্য

ভারতবর্ষের পূর্ব দিকে বঙ্গোপসাগর এবং পশ্চিম দিকে আরব সাগরের তীরে যে সমভূমি অবস্থান করছে উপকূল অঞ্চল জুড়ে সেই সমভূমির মধ্যে কিন্তু প্রাকৃতিক এবং অপ্রাকৃতিক বিষয়ের ভিত্তিতে কিছু পার্থক্য রয়েছে।

অবস্থান - যদি প্রাকৃতিক বৈসাদৃশ্য বা পার্থক্য খেয়াল করি ,যদি আমরা তার অবস্থান হিসেবে দেখি তাহলে দেখব ভারতবর্ষের পূর্ব দিকে বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী যে উপকূলীয় সমভূমি সেটি হচ্ছে পূর্বঘাট পর্বতমালার সন্নিকটে তাকে বলব পূর্ব উপকূলীয় সমভূমি ।অপরদিকে পশ্চিমে আরব সাগর ও পশ্চিমঘাট পর্বতমালার মাঝে যে উপকূলীয় সমভূমি অবস্থান করে তাকে আমরা বলব পশ্চিম উপকূলীয় সমভূমি।

উচ্চতা - যদি উচ্চতার হিসাবে দেখি তাহলে পূর্ব উপকূলীয় সমভূমির কিন্তু সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা কিছুটা কম হয় ।অপরদিকে পশ্চিম উপকূলীয় সমভূমি এর গড় উচ্চতা সমুদ্র সমতল থেকে অধিক হয় ।

উপকূলের প্রকৃতি -উপকূলের প্রকৃতি যদি বিচার করি তাহলে পূর্ব উপকূলীয় সমভূমি কিন্তু ভগ্ন প্রকৃতির নয় ,অপরদিকে পশ্চিম উপকূলীয় সমভূমি কিন্তু ভগ্ন প্রকৃতির।

বালিয়াড়ির অবস্থান-

যদি আমরা বালিয়াড়ির অবস্থান দেখি তাহলে পূর্ব উপকূলের সমভূমি অঞ্চলে কিন্তু বেশ কিছু জায়গায় বালিয়াড়ির অবস্থান দেখা যায় । অপরদিকে পশ্চিম উপকূলের সমভূমিতে কেরালার মালাবার উপকূল ছাড়া সেই অর্থে কিন্তু বালিয়াড়ির অবস্থান দেখা যায় না ।

হ্রদ এবং উপহ্রদ সংখ্যা -হ্রদ এবং উপহ্রদের সংখ্যা যদি আমরা দেখি তাহলে পূর্ব উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চলে হ্রদ এবং উপহ্রদের সংখ্যা তুলনামূলক কম। অপরদিকে পশ্চিম উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চলে হ্রদ এবং উপহ্রদের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি।

নদ নদীর প্রবাহ -নদ নদীর প্রবাহ যদি আমরা দেখি তাহলে দেখব পূর্ব উপকূলীয় সমভূমির ওপর দিয়ে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নদী প্রবাহিত হয়েছে । যেমন ধরো মহানদী ,গোদাবরী ,কৃষ্ণা ,কাবেরী ।অপরদিকে পশ্চিম উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চলের ওপর দিয়ে কিন্তু সেই অর্থে খুব বেশি সংখ্যক গুরুত্বপূর্ণ নদী প্রবাহিত হয়নি ব্যতিক্রম নর্মদা ,তাপ্তি ।

বৃষ্টিপাতের পরিমাণ - আমরা যদি বৃষ্টিপাতের পরিমাণ দেখি তাহলে পূর্ব উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চলে বৃষ্টিপাত মাঝারি । অপরদিকে পশ্চিম উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কিন্তু বেশি

বন্দর-

যদি আমরা অপ্রাকৃতিক পার্থক্য দেখি তাহলে পূর্ব উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চলের বন্দরের সংখ্যা তুলনামূলক কম পশ্চিম উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চলে বন্দরের সংখ্যা বেশি ।

কৃষিকাজ ও খনিজ - যদি আমরা কৃষিকাজের অগ্রগতি দেখি তাহলে পূর্ব উপকূলের সমভূমি অঞ্চলে কৃষিকাজের ক্ষেত্রে প্রাচুর্য লক্ষ্য করা যায় ।প্রচুর পরিমাণে খনিজ সম্পদ পাওয়া যায়। অপরদিকে পশ্চিম উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চলের কৃষিকাজ খুব একটা ভালো হয় না খনিজ সম্পদেও সমৃদ্ধ নয় ।

শিল্প- আমরা শিল্পের অবস্থান দেখি তাহলে পূর্ব উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চল শিল্পে সমৃদ্ধ এবং পশ্চিম উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চল কিন্তু শিল্পে অতটা সমৃদ্ধ নয় ।

জনঘনত্ব - যদি আমরা জনঘনত্ব বা জনসংখ্যার বন্টন দেখি তাহলে পূর্ব উপকূলের সমভূমি অঞ্চলে জনঘনত্ব অধিক ।জনসংখ্যা বন্টন বেশি।

পশ্চিম উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চলে জনসংখ্যার ঘনত্ব ও জনসংখ্যার বন্টন কিন্তু তুলনামূলকভাবে কম ।

যোগাযোগ ব্যবস্থা - আমরা যদি যোগাযোগ ব্যবস্থার হিসাবে দেখি তাহলে পূর্ব উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত এবং পশ্চিম উপকূলের সমভূমি অঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থা ততটা উন্নত নয় ।

শ্রেণীবিভাগ - আমরা যদি এর শ্রেণীবিভাগ গুলোকে দেখি তাহলে পূর্ব উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চলে প্রধানত দুটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায় একটি হলো উত্তর সরকার উপকূল অপরটি হলো করমন্ডল উপকূল ।আবার এই উত্তর সরকার উপকূল এর দুটি ভাগ একটি উড়িষ্যা উপকূল অন্যটি হচ্ছে অন্ধ্র উপকূল ।

অপরদিকে পশ্চিম উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চল কে কিন্তু বেশ কয়েকটি অঞ্চলে ভাগ করা যায় ।

পশ্চিম উপকূলীয় সমভূমির মধ্যে রয়েছে গুজরাটের কাথিয়াবাড় উপদ্বীপ, গুজরাট সমভূমি ,কচ্ছ উপদ্বীপ । মহারাষ্ট্র সংলগ্ন অঞ্চলে রয়েছে কঙ্কন উপকূল ।এরপরে আমাদের কর্ণাটক সেখানে রয়েছে কর্ণাটক উপকূল এবং কেরালা সংলগ্ন অঞ্চলে রয়েছে মালাবার উপকূল।

এই হল পূর্ব উপকূলীয় সমভূমি ও পশ্চিম উপকূলীয় সমভূমি এর মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য।

4.অতিরিক্ত ভৌম জল উত্তোলনের প্রভাব গুলি আলোচনা করো।

মৃত্তিকার মধ্যের যে জল তাকেই বলে ভৌম জল । মানুষের জীবনে ভৌম জলের গুরুত্ব অপরিসীম । কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধি শিল্পায়ন ও নগরায়ন এবং কৃষি ক্ষেত্রে জলসেচের কারণে ক্রমাগত ভৌম জলের চাহিদা বৃদ্ধির ফলে ভৌম জল অতিরিক্ত ব্যবহার করা হচ্ছে । ফলে মাটির তলা থেকে অধিক পরিমাণে ভৌম জল উত্তোলন করা হচ্ছে এবং ভৌম জলের পরিমাণ আস্তে আস্তে কমছে। অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে কিছু সমস্যা সৃষ্টি হয় । যেমন ধরো আমরা বলতে পারি পানীয় জলের অভাব । মানুষের পানীয় জলের প্রধান উৎস হচ্ছে ভৌম জল।

ভৌম জল বেশি সংগ্রহের সময় মাটিতে দ্রবীভূত যে লবন , মাটির নিচে থাকে সেখান থেকে ওপরে উঠে আসে।

তৃতীয় সমস্যা হতে পারে - বিভিন্ন রোগের প্রাদূর্ভাব । মাটির নিচ থেকে অতিরিক্ত পরিমাণে জল সংগ্রহের ফলে আর্সেনিক জলএর সাথে মিশে যায় । ফলে এই বিষাক্ত জলপান করলে কিন্তু বিভিন্ন ধরনের রোগব্যাধি হতে পারে ।

এছাড়া যদি জলস্তর নিচে নেমে যায় তাহলে উদ্ভিদ স্বাভাবিক পুষ্টি মৌল সংগ্রহ করতে পারবে না । ফলে উদ্ভিদের মৃত্যু হতে পারে ।এর ফলে বাস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে পড়বে । তাই আমাদের ভৌম জল ব্যবহারের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সচেতন হতে হবে।



Post a Comment

0 Comments