Ad Code

হীরে তৈরি

কীভাবে তৈরি হয় হীরা?
জানিয়েছেন - সৌম্য মুখার্জী 
প্রথমেই বলে রাখা ভালো কয়লাকে চাপ ও তাপ দিলে হীরা তৈরি হয় এই ধারণা অর্ধসত্য। অর্ধসত্য এই কারণে যে কয়লা নির্দিষ্ট চাপ ও তাপে হীরা হয় এটা ঠিক নয়। কারণ হীরা ভূ-গর্ভে  যে গভীরতায় তৈরি হয় সেখানে কয়লা পাওয়া যায় না।  স্থান ভেদে কয়লা মাটির নিচে দেড় কিলোমিটার এর মধ্যে পাওয়া যায়। কিন্তু হীরা তৈরি হয় মাটি থেকে স্থান ভেদে ৩০০ কিলোমিটার থেকে ৪০০কিলোমিটার নীচে, এমনকি  ৫০০ কিলোমিটার নিচেও তৈরি হয়। আর তাছাড়া কয়লার যা বয়স তার থেকে হীরের বয়স অনেক বেশি তাই কয়লা থেকে হীরে হওয়ার কোনো প্রশ্নই নেই ।

তাহলে দেখে নিই হীরে কী করে প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি হয়।
ভূতত্ববিদ হিসাবে প্রায় ছয় বছরের ক্যারিয়ার এ হীরা নিয়ে কাজ করেছি মাত্র দু মাস। মধ্যপ্রদেশের পান্না তে হীরের খনি আছে। খনির নাম মাঝগবন খনি। এটা দেখতে অনেকটা গাজর এর মতো। আসলে এটা একটা কিম্বারলিট(kimberlite)/ lamproite পাইপ। যেটা প্রায় ৬.৫ হেক্টর এরিয়া জুড়ে আছে ও গভীরতা ৮০ মিটারের মতো।

এই যে এতগুলো কথা বললাম এইগুলো বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যাবে হীরে কীভাবে তৈরি হয়। মধ্যপ্রদেশ এর পান্না জায়গাটা একটা craton বা সব থেকে পুরোনো ভূমিরূপের ওপর অবস্থিত। মূলত পৃথিবীর কন্টিনেন্টাল crust এর নিচে ম্যান্টল এর মধ্যে হীরে তৈরি হয়। হীরে সাধারণত (ব্যতিক্রম আছে) সামুদ্রিক বা ওসিআনিক crust এ পাওয়া যায় না কারণ ওসিআনিক crust ভারী তাই সবসময় কন্টিনেন্টাল crust এই নীচে subduction হয় বা ডুবে যায় ও গলে গিয়ে অন্য জায়গায় নতুন ভাবে crust তৈরি করে (সেটা অন্য আলোচনা)। পান্না বুন্ডেলখন্ড craton এর ওপর অবস্থিত। এছাড়া ভারতে ধরবার craton, আরাবাল্লি এসব জায়গা তেও পাওয়া যায়।

যখন ওসিআনিক crust continental crust এর নিচে subduction হয় বা ডুবে যায় তখন ঐখানকার চাপ ও তাপ এ অনেক রাসায়নিক বিক্রিয়া হয়। 300 কিলোমিটার থেকে 500 কিলোমিটার নীচে যেখানে subduction এর জন্য oceanic crust এর থেকে প্রয়োজনীয় কার্বন যা বিভিন্ন সামুদ্রিক পাথর যেমন limestone বা dolomite supply করে। এই সময় ওসিআনিক crust গলে গিয়ে কোনো দ্রবণ যাতে কার্বন আছে বা কার্বন এর উপাদান আছে এরকম কোন তরল বা গ্যাসীয় উপাদান সেটি ওপরে মানে mantle এ এসে থেমে যায়। ঐখানে এবার যদি চাপ ৪৫ থেকে ৬০ কিলোবারস হয় ও উষ্ণতা ৯০০ থেকে ১৩০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয় সেটি বিজারণ বিক্রিয়া দ্বারা হীরা তৈরির অনুকূল। eclogitic হীরা যেটিতে কার্বন এর অর্গানিক রূপ দেখে যায় সেটি এই subduction ও অর্গানিক ম্যাটার যুক্ত ওসিআনিক crust এর গলে যাওয়াকে স্ট্রংলী সমর্থন করে। 

হীরা কার্বন এর একটি মেটেস্টেবল বহুরূপতা । কার্বন পরমাণু গুলো এখানে face centered ঘনক crystal এর lattice এ থাকে। যেটি graphite এর থেকে কম স্টেবল। কিন্তু এই  অনুকূল কন্ডিশন এ এতো কম সময়ে হীরা থেকে graphite এ পরিবর্তন হয় না। এই সময় এই চাপ ও তাপে ও এই গভীরতায় আর একটি ঘটনা ঘটে যেটি হলো কিম্বারলিট বা lamproite মাগমা তৈরি হয় ও কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস থাকার জন্য প্লবতার কারণে crust এর fracture এর মধ্যে দিয়ে বা ম্যান্টাল প্লুমের মাদ্ধমে ওপরে উঠে আসে তীব্র বেগে। এই সময় ওই গলিত মাগমা এর সাথে ওই মানটলে তৈরি হওয়া হীরে উঠে আসে crust এ। এই  সময় হীরের ওপর  চাপ অনেক হ্রাস পায় কিন্তু উষ্ণতা প্রায় একই থাকে ফলে এটির রাসায়নিক গঠন পরিবর্তন হতে পারে কিন্তু এটি এত তাড়াতাড়ি উঠে আসে ও ঠান্ডা হয়ে যায় যে এটি আর graphite এ পরিবর্তন হওয়ার সুযোগ পায় না। এই উঠে আসার বেগ খুব বেশি। ওই ৪০০-৫০০ কিলোমিটার নীচে থেকে পৃথিবীর crust এ আস্তে একটা হীরে সময় নেয় এক মাস বা  কয়েক ঘন্টা মাত্র। 
এই যে মাগমা টা ওপরে উঠে আসে সেটি হলো kimberlite যা কিম্বারলিট পাইপ তৈরি করে আর তাতেই হীরে পাওয়া যায়। আসলে হীরে যে চাপ ও তাপে তৈরি হয় কিম্বারলিট  ও সেই একই চাপ ও তাপে তৈরি হয়। তাই জন্য কিম্বারলিট পাইপ এই হীরা বেশি পাওয়া যায়। এই kimberlite পাইপ ৫ থেকে ১০ হেক্টর বা আরো বড় হয় আর এটির মধ্যে দিয়েই হীরার খনন ও উত্তোলন হয়। এই জন্যই মধ্যপ্রদেশ এর মত স্টেবল craton এরিয়া তে বা সাউথ ইন্ডিয়ার কিছু জায়গায় যেখানে ইন্ডিয়ান প্লেট এর রিউনেওন হট স্পট এর ওপর দিয়ে আসার সময় যেখানে ম্যান্টাল প্লুমে এর দ্বারা লাভা ওপরে উঠে এসেছিল সেখানেই প্রধানত হীরা পাওয়া যায়।

এছাড়াও হীরা শক ওয়েভ এও তৈরি হয়। যখন কোনো উল্কা এসে পৃথিবীতে ধাক্কা মারে তাতে তৈরি সক ওয়েভ দিয়েও কর্বন পরিবর্তিত হয়ে হীরে তৈরি করে এবং ওখানেও চাপ ও তাপ একই থেকে। তাই জন্যই জুরাসিক এযে (যে সময় একটি উল্কা পৃথিবীতে এসে পড়ে বলে মনে করা হয়) সেই সময়কার পাথরে হীরে পাওয়া যায় যদিও তার আকার অনেক অনেক ছোট।

অনেক সময় বিভিন্ন রং এর হীরা পাওয়া যায়। এগুলোর দাম আরো বেশি হয় কিন্তু আসলে এগুলো হীরের মধ্যে যখন অবিশুদ্ধি ঢুকে যায় তখন তৈরি হয়।
যেমন নাইট্রোজেন যদি হীরের লাটিসে ঢুকে যায় তখন হলুদ হীরা তৈরি হয় বা boron ঢুকে গেলো নীল হীরা।

কলমে-
সৌম্য মুখার্জী।

Post a Comment

0 Comments